প্রথম দিন – দুপুর ২ টা
——–
“অনেকক্ষণ হয়ে গেলো না?” – দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে বললো শান্তনু। “টেনশন লাগছে কিন্তু। ভিতরে যাবি?”
দোতলার কোমর-সমান উঁচু বারান্দার রেলিঙে পা ঝুলিয়ে বসে আছে পলাশ। “জয়িতার এই ব্যাপারটাই আমার ভালো লাগে না। খামাখা টেনশন দেয়। এই ছেলের সাথে একাই কেন কথা বলতে হবে ওর? তার উপর আবার ছেলেদের হলে এসে, দরজা বন্ধ করে! এতো ভরসা কেমনে ওর এই ছেলের উপর ? এন্ড অফ দা ডে, হি ইজ আ ব্লাডি ক্যাডার রে ভাই।”
লাফ দিয়ে রেলিং থেকে নামলো পলাশ। “নাহ, এতো টেনশন ভালো লাগছে না। চল, নক করি।”
মোহসিন হলের ২০৮ নম্বর রুমের দরজায় নক করার প্রয়োজন হল না। দরজা খুলে বের হয়ে এলো জয়িতা আর সঞ্জীব। সাথে দমকা বাতাসের মতো এলো ছেলেদের হলের অগোছালো ঘরের চিরাচরিত সিগারেটের ধোঁয়ার গন্ধ। সঞ্জীবের পরনে রাতে ঘুমানোর সবুজ-কালো চেক পায়জামা, গায়ে কালো রঙের একটা গোলগলা পিঙ্ক ফ্লয়েড’এর প্রিজম আঁকা গেঞ্জি। তার চোখ লাল। এই লাল ঘুমহীন রাতের কারণেও হতে পারে, আবার অ্যালার্জিও হতে পারে।
শান্তনু সরাসরি সঞ্জীবের চোখের দিকে তাকাল। সঞ্জীব কি চোখ সরিয়ে নিলো? শুধু মোহসিন হল না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র-সবাই যে সঞ্জীবের পথ এড়িয়ে চলে, সেই সঞ্জীব আমার চোখে চোখ রাখতে অস্বস্তি বোধ করছে! – শান্তনু হিসাবটা মিলাতে পারল না। আবার তাকাল, সঞ্জীব আবারো চোখ সরিয়ে নিলো। এক মুহূর্তের জন্য শান্তনুর মনে একটা অদ্ভুত চিন্তা উঁকি দিলো – সঞ্জীবের চোখের লাল কি কান্নার ফল?
পলাশ তাকিয়ে আছে জয়িতার দিকে। জয়িতার অভিব্যক্তি দেখে কিছু বোঝার উপায় নাই। ঘরের ভিতর কি হয়েছে, সেটা অনুমানের চেষ্টাতেও গেলো না পলাশ। সরাসরি প্রশ্ন করলো – “ও আছে আমাদের সাথে?”
জয়িতা ঘাড় ঘুড়িয়ে সঞ্জীবের দিকে তাকাল।
সঞ্জীব প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের আগুন ধরাল। তার ফর্সা মুখটা পাথরের মতো কঠোর। সিগারেটে বড় একটা টান দিয়ে সে একে একে পলাশ আর শান্তনুর দিকে তাকাল; এবার সরাসরি তাদের চোখের দিকে। চোখের সাদা অংশে গাছের ডালের মতো রক্তনালীগুলি যেন ধীরে ধীরে চোখের মণিকে পেঁচিয়ে ধরতে চাইছে। পরিষ্কার কণ্ঠে সঞ্জীব বলল – “চল, প্ল্যানটা ফাইনাল করে ফেলি।”
শান্তনু বুঝতে পারলো, সঞ্জীবের লাল চোখ বিষয়ক তার অনুমানটা ভুল ছিল না। সঞ্জীবের মধ্যে জয়িতা এমন কিছুই দেখেছিল, যা সে বা পলাশ কোনদিন দেখেনি।
——
দ্বিতীয় দিন – সকাল সাড়ে ১০ টা
——–
সঞ্জীব একটা বড় ছাত্রসংগঠনের বড় নেতা এবং ক্যাডার। ছাত্র রাজনীতি যখন সে শুরু করেছিল, তখন মেধাকে পুঁজি করেই শুরু করেছিল। ধীরে ধীরে জীবনে আগমন ঘটল অস্ত্রবাজ বন্ধুদের। তারপর একসময় অস্ত্রই হয়ে উঠলো সবচেয়ে কাছের বন্ধু। এলো ক্ষমতা, প্রচণ্ড ক্ষমতা। এলো নতুন নতুন বন্ধু, দূরে চলে গেলো পুরানো বন্ধুরা।
কিন্তু জয়িতা কেন যেন দূরে সরে গেলো না। তাদের মধ্যে কখনোই প্রেম ছিল না, কিন্তু দুজনের প্রতি দুজনের একটা অলিখিত অধিকারবোধ ছিল। জয়িতাই পৃথিবীর একমাত্র মানুষ যে সঞ্জীবের চোখে চোখ রেখে বলতে পারে – “কাজগুলি তুই ঠিক করছিস না সঞ্জীব। এখনো সময় আছে ফিরে আয়।” স্বভাবতই সঞ্জীব এসব কথা কানে তোলেনি। সে তার নিজের পথে নিজের মতো হেঁটে গেছে। কিন্তু তবুও রাতের একাকীত্বে সঞ্জীবের কানে ঠিকই বেজেছে জয়িতার বলা কথাগুলি।
পলাশের মামা’র কাছ থেকে ধার করে আনা ছাই রঙের পুরানো টয়োটা গাড়িটা এখন সাভার ছাড়িয়ে কালিয়াকৈর-এর পথে। স্টিয়ারিং হুইলে জয়িতা, চোয়াল শক্ত, চোখ সামনের রাস্তায়। পিছনের সীটে বসে সঞ্জীব হঠাৎ খেয়াল করলো, অনেকক্ষণ ধরে সে জয়িতার দিকে তাকিয়ে আছে। কানের পাশে উড়তে থাকা চুল, স্টিয়ারিং হুইলে চেপে বসা রগ-ফুলে ওঠা হাত – এই জয়িতাকে কেন যেন খুব চেনাচেনা লাগলো সঞ্জীবের। জয়িতাকে এই রূপে কখনো দেখেনি সে, তাও সঞ্জীবের মনে হল, ঠিক এই মেয়েটাকেই হয়তো সে অনেক আগে কোথাও না কোথাও দেখেছে।
জয়িতার পাশে পলাশ। চোখ আর হাতের আঙ্গুল মোবাইল ফোনে। ফেইসবুকের নিউজফিডে তন্নতন্ন করে কিছু খুঁজছে সে। হঠাৎ করে আঙ্গুল থেমে যায় তার। মনোযোগ দিয়ে পড়া শুরু করে সে।
রাস্তা থেকে চোখ না সরিয়েই জয়িতা প্রশ্ন করে, “কি রে? কিছু পেলি?”
“হুম … বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর। কোর্টে নেয়ার সময় পুলিশ ভ্যান থামিয়ে অস্ত্র দেখিয়ে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ মামলার আসামি সিরাজ-উদ-দৌলাকে। কিডন্যাপাররা সবাই মুখোস পরা ছিল। তিনজন মুখোশধারী পুলিশভ্যানটিকে ঘিরে ফেলে, তারপর অস্ত্রের মুখে সিরাজ-উদ-দৌলাকে হাত-বাঁধা অবস্থায় পাশে থেমে থাকা সাদা একটা মাইক্রোবাসে উঠিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী গাড়িতে অপেক্ষারত চতুর্থ মুখোশধারীকে একজন নারী বলে ধারনা করা হচ্ছে।”
পিছনের ডানদিকের সীটে শান্তনু। সেও গভীর মনোযোগে মোবাইল দেখছে। “প্রথম আলোও দিয়েছে। বাহ, মিডিয়া তো দেখি ভালোই ফাস্ট।”
পলাশ হেসে উঠল সামনের সীট থেকে। “মিডিয়া তো গরম খবর পেলেই ফাস্ট। শালারা নায়িকা প্রেগন্যান্ট হওয়ার আগেই খবর পেয়ে যায় যে বাচ্চার বাপ কে। বেশি খুশি হইস না। নিজেরে ভিআইপি ভাবা বন্ধ কর।”
পলাশের কথায় হেসে ওঠে সবাই। গতকাল দুপুরের পর এই প্রথম মনে হয় চারজনের মুখে হাসি ফুটল কিন্তু হাসিটা স্থায়ী হল মাত্র কয়েক সেকেন্ড।
শান্তনু আর সঞ্জীবের মাঝখানে বসিয়ে রাখা জ্ঞানহীন সিরাজ-উদ-দৌলা হঠাৎ নড়ে উঠলো। হাতে রাখা রিভলভারটা শক্ত করে ধরল সঞ্জীব। শান্তনু ততক্ষণে হাতের রুমাল ভিজিয়ে ফেলেছে বোতলে রাখা ক্লোরোফর্ম-এ। শান্তভাবে রুমালটা সিরাজ-উদ-দৌলার নাকের কাছে ধরে আবারো তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিলো সে।
রুমালটা একটা পলিথিনের ব্যাগে ভরতে ভরতে সঞ্জীবের দিকে তাকিয়ে বলল, “সবই যদি পিস্তল দিয়ে করবি, তাইলে টিমের মধ্যে একটা হাফ-ডাক্তার রাখসিলি ক্যান?”
গাড়ি ছুটে চলছে টাঙ্গাইলের পথে।
আর ফেইসবুকের নিউজফিড ভেসে যাচ্ছে হাজারো জল্পনা-কল্পনায়।
——–
দ্বিতীয় দিন – সন্ধ্যা ৭ টা
——–
ফেইসবুকের নিউজফিডে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়লো একটা লাইভ ভিডিও।
অজ্ঞাত কোন এক জায়গা থেকে আপলোড করা হয়েছে ভিডিওটা। অন্ধকার একটা ঘরের মাঝখানে একটা কাঠের টেবিল। টেবিলের অন্য প্রান্তে একটা চেয়ার। তাতে বসা সিরাজ-উদ-দৌলা। তার হাত-পা চেয়ারের সাথে বাঁধা। চোখ কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা। মুখ রুপালী টেপ দিয়ে আটকানো। ভিডিওটাতে কোন অডিও নেই। সিরাজ-উদ-দৌলা’র সামনে টেবিলের উপর একটা কাগজে গোটা-গোটা অক্ষরে লেখা – “রাত ঠিক ৮টায়… “
নির্বাক ছায়াছবির মতো গোটা দেশ সিরাজ-উদ-দৌলাকে দেখছে। সিরাজ-উদ-দৌলার কাপড়ে, মুখে রক্ত। নিস্তেজ হয়ে আছে সে। তারপরও মাথা ঝাঁকিয়ে, শরীর কাঁপিয়ে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে সিরাজ-উদ-দৌলা। কিন্তু কেউ কোন শব্দ শুনতে পাচ্ছেনা।
ফেইসবুকের এই লাইভের খবর এখন জায়গা করে নিয়েছে সব টিভি চ্যানেলের ব্রেকিং নিউজে। নিয়মিত অনুষ্ঠানের সাথে স্ক্রিন ভাগাভাগি করে নেয়া স্ক্রল থেকে এই খবর এখন পৌঁছে গেছে নিউজরুমের স্পেশাল টক শো তে। ইতিমধ্যেই হাজির হয়ে গেছে সকল রকমের বিশেষজ্ঞরা। নানারকম বিশ্লেষণে, গুজবে গরম বাংলাদেশের আকাশ বাতাস।
প্রাক্তন সেনাবাহিনী প্রধান, সাবেক পুলিশ প্রধান আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন, কিডন্যাপারদের অবস্থান শীঘ্রই বের করে ফেলা হবে। আইপি ট্র্যাক করে এদের খুঁজে বের করা নাকি শুধুই সময়ের ব্যাপার। কিন্তু আরেক চ্যানেলে একজন তরুণ আইটি বিশেষজ্ঞ বলে যাচ্ছেন, যেভাবে নিজেদের আইপি লুকিয়ে ভিডিওগুলি আপলোড করা হয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে যে কিডন্যাপারদের দলে খুব ভালো মানের হ্যাকার আছে যে কিনা বারবার তাদের অবস্থান সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ইনফরমেশন তৈরি করছে। ইতিমধ্যেই নাকি ভিডিওটির আপলোড করার লোকেশন হিসেবে টোকিও, নাইরোবি, বাগদাদ, সানফ্রানসিসকো সহ আরও শ’খানেক শহরের নাম উঠে এসেছে।।
এর মাঝে নতুন উপসর্গ হিসেবে দেখা দিয়েছে সদ্য-গজানো একটি ফেইসবুক গ্রুপের কর্মকাণ্ড। গ্রুপের নাম “আবার হারকিউলিস”। এই গ্রুপ একের পর এক পোস্ট দিয়ে আম জনতাকে অনুরোধ করে যাচ্ছে, কেউ যেন তথাকথিত এই কিডন্যাপারদের পরিচয় বা অবস্থান আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে না জানিয়ে দেয়। বরং সবাই যেন ভুলভাল তথ্য দিয়ে আরও বেশি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। আমজনতা ইতিমধ্যে মাঠে নেমে গেছে; থানায় নাকি একের পর এক ফোন আসছে; কেউ বলছে সাদা মাইক্রোবাসটিকে কুমিল্লা পার হতে দেখা গেছে, কেউ আবার জানিয়েছে গাড়িটিকে নাকি পরিত্যাক্ত অবস্থায় বসিলাতে পানির পাশে পাওয়া গেছে।
গুজবে ভর করে নতুন গুজব আসে।জনমনে নতুন শঙ্কা তৈরি হল – তাহলে কি ফেইসবুক বন্ধ করে দেয়া হবে? আইটি মন্ত্রী এখনো কোন অফিসিয়াল বক্তব্য দেন নি; কিন্তু তার পক্ষে যে এ জাতীয় সিদ্ধান্ত নেয়া খুবই সম্ভব, সেটা নিয়ে কারো কোন সন্দেহ নেই।
কিন্তু তখনি জানা গেলো, ভিডিওটি শুধু ফেইসবুকেই না – ইউটিউব, ইন্সটাগ্রামসহ আরও বেশ কিছু অচেনা ওয়েবসাইট থেকেও লাইভ স্ট্রীমিং হচ্ছে। তাহলে তো আরও ভয়ের ব্যাপার হল। তবে কি এবার ইন্টারনেটই বন্ধ করে দেয়া হবে?
এতোসব জল্পনা-কল্পনার মধ্যেই রাত ৮ টা বেজে গেলো।
——-
রাত ৮ টা
——-
সিরাজ-উদ-দৌলা’র পিছনে একে একে চারজন মুখোশধারী এসে দাঁড়ালো। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ঠিকই ছিল, চতুর্থ মুখশধারি আসলেই একজন নারী ছিল।
ঠিক ৮ টার সময় ভিডিওতে সাউন্ড আসলো। চতুর্থ মুখোশধারী কথা বলা শুরু করলো।
“আপনাদের উদ্দেশ্যে সিরাজ-উদ-দৌলা কথা বলবে এখন। প্রথমে বলতে রাজি হচ্ছিল না। কিন্তু এখন হয়েছে। তার কথা শেষ হওয়ার পর আমরা তাকে এক জায়গায় ফেলে রেখে আসবো। এবং তার অবস্থান জানিয়ে দিবো। না, তাকে মেরে, তারপর ফেলে আসার কোন পরিকল্পনা আমাদের নাই। তবে সে যদি সব সত্যি না বলে, তাহলে আমাদের হাতে আর কোন বিকল্প রাস্তা থাকবে না।
সিরাজ-উদ-দৌলা এখন কেমন আছে? খুব একটা ভালো থাকার কথা না। কারণ, আমরা ওকে মনের সুখ মিটিয়ে মেরেছি। খুব শান্তি লেগেছে। সত্যি খুব শান্তি লেগেছে। আমি এর আগে কোনদিন কোন মানুষের গায়ে হাত তুলিনি। যদিও আমার গায়ে হাত দিয়েছে অনেকেই। নোংরা সব মানুষের নোংরা সব হাত – বারবার ছুঁয়ে দিয়েছে আমাকে; আমার মতো আরও অসংখ্য মেয়ের শরীরকে। আজকে সিরাজ-উদ-দৌলাকে মারার সময় সেই মানুষগুলির চেহারাও ভেসে উঠছিল বারবার। তাই এই অমানুষটাকে রক্তাক্ত করতে পেরে ভীষণ ভালো লেগেছে আমার।
বিফোর হি স্টার্টস স্পিকিং, আরেকটা কথা বলে নিই। হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই ফেইসবুক, ইন্টারনেট এইসব বন্ধ করে দেয়া হবে। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, প্লিজ এটা করবেন না। নিজেদের দুর্বলতা এভাবে ঢেকে রাখলে লোকে কি বলুন? তাছাড়া ইন্টারনেট বন্ধ করে খুব একটা লাভও হবে না। ঠিক রাত ১২ টার সময় ১ হাজার মোবাইল ফোনে একটা মেসেজ যাবে। মেসেজটা পাবে শুধু সেই এলাকার মানুষ যেখানে সিরাজ-উদ-দৌলাকে ফেলে আসা হবে। ওই ১ হাজার নাম্বারের মধ্যে সেই এলাকার থানার ওসি, সাংসদ আর কিছু মান্যগণ্য ব্যক্তিও থাকবেন। বাকিরা সবাই আমজনতা। সিরাজ-উদ-দৌলার কাছে কে আগে পৌঁছবে, তা আমরা জানি না। এবং তারপর তার বিচার কি হবে – সেটাও আপনাদের উপরই ছেড়ে দেয়া হল।
আমার পাশে দাঁড়ানো এই বন্ধুর হাতে যে পিস্তলটি দেখছেন, সেটা লোড করা। সেটা সিরাজ-উদ-দৌলা খুব ভালমতোই জানে। সিরাজ-উদ-দৌলা এটাও এতক্ষণে জেনে গেছে যে, ওর মতো একটা পশুকে গুলি করে মেরে ফেলতে আমার এই বন্ধুর হাত একফোঁটাও কাঁপবে না। এখন আমরা সিরাজ-উদ-দৌলা’র মুখ খুলে দিবো। এবং ও সব সত্যি কথা বলবে। ঠিক না সিরাজ-উদ-দৌলা?”
জয়িতা সিরাজ-উদ-দৌলা’র মুখের টেপ খুলে দিতে এগিয়ে যাচ্ছিলো। পাশে দাঁড়ানো সঞ্জীব হাত ধরে জয়িতাকে থামায়।
“একটা কথা বলতে ভুলে গেছিস মনে হয়। তোর নামটা বললি না?”
জয়িতা থামে। সিরাজ-উদ-দৌলা’র পিছনে দাঁড়িয়ে তার দুই কাঁধে দুই হাত রেখে সরাসরি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে জয়িতা উত্তর দেয় – “আমার নাম নুসরাত।”
——
ঠিক তখনি… ঠিক সেই মুহূর্তটাতেই সঞ্জীবের কাছে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যায়; কেন জয়িতাকে তখন এতোটা চেনাচেনা লাগছিল।
মুখোশে ঢাকা নিজেদের চারজনের মাঝে সঞ্জীব যেন গর্ভধারিণীর জয়িতা, সুদীপ, আনন্দ আর কল্যাণকে খুঁজে পায়।
Comment
We all are just victim of reality or subject to explanation..